দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন হচ্ছে। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে; চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনে চলছে ভোট গ্রহণ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন বহু প্রতীক্ষার পর শুরু হলেও শুরুতেই একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে। ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, কিছু কেন্দ্রে ব্যবহৃত অমোচনীয় কালি ঘষে উঠিয়ে ফেলা যাচ্ছে এবং কোথাও কোথাও সিলবিহীন ও স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের কয়েকটি কক্ষে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৪০১ ও ৪০২ নম্বর কক্ষ এবং কলা ভবনের ৩১২৪ নম্বর কক্ষে সরেজমিনে দেখা যায়, ভোটারদের আঙুলে দেওয়া কালি ঘষলেই উঠে যাচ্ছে।ছাত্রদল প্যানেলের জিএস (সাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী শাফায়াত হোসেন প্রার্থীদের অভিযোগ বলেন:”ভোটারের আঙুলে দেওয়া কালি এক ঘষাতেই উঠে যাচ্ছে। এতে একজন ভোটার বারবার ভোট দিতে পারবে – এটা জাল ভোটের সুযোগ তৈরি করছে।”দ্রোহ পর্ষদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী রিজু লক্ষী অবরোধ এবং জিএস প্রার্থী ইফাজ উদ্দিন আহমেদ ইমু-ও একই অভিযোগ করেন। ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় জানান: “আমি নিজে ভোট দিয়েছি, কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আঙুলের কালি উঠে গেছে। এমন একটি নির্বাচনে আমরা আদর্শ মান আশা করেছিলাম, কিন্তু নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে।তিনি আরও অভিযোগ করেন, আইটি ভবনের ২১৪ নম্বর কক্ষে প্রায় ২০টি স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পাওয়া গেছে। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু জানান, কয়েকটি কেন্দ্রে সিলবিহীন ব্যালট পাওয়া গেছে, যা পুরো নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন:”কালি উঠে গেলেও ভোটারদের নাম তালিকা থেকে কেটে দেওয়া হচ্ছে। ফলে একজন ভোটার পুনরায় ভোট দিতে পারছেন না।”নির্বাচন কমিশনের এক সূত্র জানিয়েছে, নির্ধারিত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে জার্মানির তৈরি অমোচনীয় কালি সময়মতো সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি, যার ফলে বিকল্প ব্যবস্থায় এই দুর্বল কালি ব্যবহৃত হয়। যদিও প্রার্থীদের পক্ষ থেকে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, তবে ছাত্রদল প্যানেল এখনো নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়নি। জিএস প্রার্থী শাফায়াত হোসেন বলেন,”জয়-পরাজয় যাই হোক, আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করতে চাই। ইতিহাসের অংশ হতে চেয়েছিলাম, দুঃখজনকভাবে তা ন্যূনতম স্বচ্ছতাও পাচ্ছে না।”তিনি আরও অভিযোগ করেন, ব্যালট দেওয়ার সময় দায়িত্ব প্রাপ্তরা ছবির সঙ্গে মিল না থাকায় অনেক ভোটারকে ব্যালট দিচ্ছেন না – যা ভোটাধিকার নিশ্চিতের পরিপন্থী। নির্বাচনের মাঝপথেই এমন অভিযোগ স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ভোট গ্রহণ চললেও নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থার ঘাটতি প্রকাশ পাচ্ছে বিভিন্ন প্রার্থী ও পক্ষের বক্তব্যে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

